Mota Kali:কুস্তিবীররা তৈরি করেছিলেন তাই নাম দেওয়া হয়ে ছিল মোটা কালী!ট্রাডিশন বজায় রেখে গরুর গাড়িতেই প্রতিমা নির্মাণ উদ্যোক্তাদের

Share

মানিকপুর 17 ই অক্টোবর:

কাঁথ কালী বড়মার পাশাপাশি এবার মোটা কালীর কাহিনী মেদিনীপুরে। মানিকপুর ভাতৃ সংঘের মোটা কালী পুজো এবারে ৫৮ তম বর্ষে পড়লো।সাত লক্ষ টাকা বাজেটে গরুর গাড়ির উপরেই মোটা কালীর নির্মাণ করেছে বর্তমান ক্লাব কর্তারা।

গোটা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়েই দূর্গাপুজোর যেমন বিভিন্ন ধরনের থিমের প্যান্ডেল হয় ঠিক তেমনি জাগ্রত কালী মায়ের ছড়াছড়ি।কোন কালী বড়মা হিসেবে পরিচিত তো কোন কালী আবার কাঁথে অবস্থান করেন। আবার কোন কোন কালি শ্মশানে থাকেন তো কোন কালী আবার মোটা নামে পরিচিত।এ রকমই এক কালীর কাহিনী হলেও মেদিনীপুর শহরের ভাতৃ সংঘের মোটা কালীর। এই কালির এরকম অভিনব নাম কেন তার ইতিহাস জানতে গিয়ে জানা যায় আজ থেকে প্রায় ৫৮ বছর আগে এই মানিক পুর এলাকায় বেশ কিছু মানুষ দেহ সৌষ্ঠবে মন দেন।এলাকায় তারা কুস্তিবীর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তারা যেমন দেহ সৌষ্ঠব প্রদর্শনী করতেন ঠিক তেমনি এলাকায় বিভিন্ন ধরনের পুজো উৎসব অনুষ্ঠানে আয়োজন করতেন।তারাই একদিন ঠিক করলেন যে তারা এই কালীপুজো করবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ।

রাতারাতি তারা চাঁদা তুলতে বেরিয়ে চাঁদা দিয়ে কালীপুজোর আয়োজন করলেন।এই কালীর প্রতিমা আর দশটা স্বাভাবিক প্রতিমা থেকে একটু আলাদা।শিল্পী কে বললেন এ কালী প্রতিমা যেন তাদের মতন বেশ মোটাসোটা এবং বিকট আকারের হয়। ঠিক তখন থেকেই গরুর গাড়ির উপরে এই ২৫ ফুটের মোটা কালী প্রতিমা তৈরি হলো।যেহেতু প্রতিমাকে বিসর্জন দিতে হবে তাই একটি গরুর গাড়ির মধ্যেই খড় বেঁধে এই প্রতিমা তৈরি করা হয়।প্রথম বছর পুজোয় বহু মানুষ দেখতে এলো এই ইউনিক কালী প্রতিমা।এরপর আস্তে আস্তে কেটে গেছে প্রায় ৫৭ টা বছর।আস্তে আস্তে কালের গর্ভে সেই দেহ সৌষ্ঠব কুস্তিবীররা হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাদের রেখে যাওয়া কালী প্রতিমা আজও সেই ভঙ্গিমায় তৈরি করছে বর্তমান প্রজন্ম। বর্তমানে সেই গরুর গাড়ি এবং সেই মোটা কালী তৈরি করেন এই ক্লাবের নতুন প্রজন্মের ছেলেরা।

তবে গত বছর তিন চারেক ধরে ভাসানের সমস্যা এবং রাস্তায় প্রচুর পরিমাণে ইলেকট্রিক তার বেড়ে যাওয়ায় তারা ২৫ ফুটের জায়গায় ২২ ফুটের কালী প্রতিমা গড়ছেন। আর সেই কালী পুজো দেখতে ভিড় জমান শহর সহ জেলার মানুষজন।তবে প্রতিমা বিসর্জনে নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার দু’ধারে জড়ো হন মানুষজন।আতশবাজি প্রদর্শন ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয় এই মোটা কালীর।

এই বিষয়ে ক্লাব কর্তা চন্দন চৌধুরী বলেন,”আজ থেকে প্রায় ৫৭ বছর আগে প্রথম এই মোটা কালীর সূত্রপাত ঘটান এই এখানকার কুস্তি বীররা।তবে তখন যা ট্র্যাডিশন রীতিনীতি ছিল এখন সেই ট্রাডিশন রয়েছে। আমরা গরুর গাড়িতে প্রতিমা গড়ি এবং গরুর গাড়ি নিয়ে বিসর্জন হয়।এই কালী প্রতিমা দেখতে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন কালীপুজোয়। অন্যদিকে আরেক ক্লাব কর্তা পাপন দে বলেন,”সেই সময় যারা এই কুস্তি করতো তারা যেমন মোটাসোটা তেমনি তারা বাহুবলের অধিকারী ছিলেন।

তাই তারা পুজো শুরুর সময় প্রতিমা ও তাদের আদলে গড়ে তোলেন।সেই ট্রাডিশন আজও বজায় রয়েছে।তারা আজ নেই কিন্তু তাদের প্রতিমা অর্থাৎ মোটা কালি আজও রয়ে গেছে আমাদের মধ্যে।


Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

dnews.in