নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর:
এ এক সম্প্রীতির মধ্যে অন্যান্য সম্প্রীতির ছবি।এক বিরাশি বছরের হিন্দু বৃদ্ধের ৪৪ বছর ধরে মুসলিম মাজার কে পাহারা দেওয়া।শুধু পাহারা দেওয়া নয় সেই সঙ্গে তার দেখভাল তার উৎসবে অংশগ্রহণ এবং প্রতিদিন বাবাকে নিত্য নতুনভাবে সাজিয়ে তোলা।বৃদ্ধের শুধু আক্ষেপ এই সুফি চাঁদসা বাবার মাজার ভগ্নপ্রায়।তার দিকে নজর দিক প্রশাসন স্থানীয় পৌরসভা অথব বিধায়ক,বিধায়ীকারা।
সালটা হবে ১৯৮০ নাগাদ,সেই সময় সুফি চাঁদসা বাবা তার দেহ রাখেন মেদিনীপুর শহরের কোতয়ালী থানার অন্তর্গত বেড়বল্লভপুর মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায়। নিজের দেহ রেখে বাবা পরলোকগমন করেন,সেই সুফি চাঁদসা বাবার ভক্ত হিসেবে এক হিন্দু পরিবার বাবার সমাধিস্থল জায়গাকে মাজারে রূপান্তরিত করার জন্য লেগে পড়েন।সবার কাছে চাঁদা,দক্ষিণা নিয়ে তিনি ছোট্ট করে একটি মাজার বাবার নামে তৈরি করে শুরু করেন বাবার ভক্তি এবং বাণী প্রচারের।শুধু বাবার ভক্তি বাণী নয় বাবার চমৎকারীতাও ধীরে ধীরে এলাকার মানুষের মধ্যে বিস্তার ঘটে।কারো ছেলে না হওয়ার বাসনা বাবার কাছে মানতে পুত্র সন্তান লাভ হয়,কেউ চাকরি পায় না পেয়ে বাবার মানতে সে চাকরি পায়,কেউ বা খেতে না পেয়ে বাবার মানতে এসে কোটিপতি হয়।এইভাবে দুঃখ-দুর্দশা এবং ভেদাভেদ ভুলে বাবার মাজারে হাজির হতে থাকেন অসংখ্য ভক্ত।
প্রতিবছর চৈত্র মাসের একটি দিন দেখে বাবার বাৎসরিক অনুষ্ঠান হয়।সেই বাৎসরিক অনুষ্ঠানে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের জনসমাগম ঘটে বাবার প্রসাদ খাওয়ার জন্য।বহু ভক্ত বাবার এই মাজারে এসে তাদের দান ধ্যান করে যান।সেই থেকেই বাবার এই মাজারের দায়িত্ব পালন করে আসছে চমত সেতুয়া।এক আধ বছর নয়,দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে তার এই ক্রিয়াকর্ম।শুধু বছরে একদিন বাৎসরিক অনুষ্ঠান তিনি করে ক্ষান্ত হননি প্রতি বৃহস্পতিবার বিনামূল্যে এই মাজারের ভোগ নিবেদন করা হয় ভক্তজনের জন্য। হিন্দু-মুসলিম কচিকাঁচারা প্রায় ২০০-৪০০ মানুষ ভিড় জমান এই প্রসাদ গ্রহণের জন্য।প্রসাদে থাকে পোলাও,বেগুন ভাজা,সাদা ভাত, ডাল তিন রকমের তরকারি,চাটনি ,পায়েস।
এই সাপ্তাহিক প্রসাদের জন্য যাবতীয় টাকা সংগ্রহ করেন বৃদ্ধ চমত সেতুয়া বিভিন্ন দোকান এবং বাড়ি বাড়ি রশিদ কেটে।এভাবেই দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে মাজারের দেখভাল করে আসছেন চমত সেতুয়া।নেই কোন অহংকার নেই,কোন ভ্রুক্ষেপ,শুধু একটাই উদ্দেশ্য মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষা করা।
এই বিষয়ে ভগ্ন ও আক্ষেপের গলায় বৃদ্ধ চমত সেতুয়া বলেন সেই ছোট বয়স থেকে আগলে রেখেছি এবং নিয়ম-কানুন মেনেই অনুষ্ঠান করা হয় বাবার।কিন্তু বর্তমানে ভগ্নদশাই পরিণতই মাজার।বহুবার বহু মানুষকে আবেদন করেছি।সাড়া দেয়নি,বহুবার আশ্বাস দিয়েও আসেনি আমাদের মাজারে।আমরা চাই একটু নজর দিক বিশিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা। বাকি ভক্ত মানব দে,শেখ আব্দুল সালাম,শেখ বুলবুল এর কথায় এই বৃদ্ধ মাজার দেখভাল করতে গিয়ে ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন কিন্তু কোন কার্পণ্য নেই। গোটা দেশজুড়েও এরকম সম্প্রীতির ছবি কোথাও দেখা যাবে না।তাই ইনি না থাকলে মাজারের অবস্থা কি যে হবে,তাই নিয়ে আমরা আতঙ্কে রয়েছে।