চন্দ্রকোনা 10 ই ডিসেম্বর:
মৃত ভোটার নিয়ে যখন রাজ্য রাজনীতি সরগরম তখন চন্দ্রকোনার একটি বুথে ৫১৭ জন ভোটারে নেই কোন মৃত ভোটার,যা।নিয়ে কড়া নজর প্রশাসনের। যদিও এলাকার মানুষ থেকে বিএলও এবং বিএলএ সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেছেন তাদের পর্যবেক্ষণ সঠিক।এলাকায় কেউ মৃত ভোটার নেই।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমায় চন্দ্রকোনা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড গোপালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়।এই ১৪৮ নম্বর বুথে একটিও মৃত ভোটার নেই।যা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে প্রশাসনিক মহলে।ইতিমধ্যে ব্লকের বিডিও ওই বুথে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন।বুথে আসার কথা শোনা যাচ্ছে মহকুমা আধিকারিকদেরও।মূলত চন্দ্রকোনার এই ১৪৮ নম্বর বুথে মোট ভোটারের সংখ্যা ৫১৭ জন।মোট এনুমারেশন ফর্ম ডিজিটাইজ হয়েছে ৫১৩ জনের। তাছাড়া ৪ জন পারমানেন্ট সিফটিং ভোটার রয়েছে।চন্দ্রকোনা পৌরসভার ১২ টি ওয়ার্ডে মোট ২১ টি বুথ রয়েছে।২০ টি বুথ মিলিয়ে মৃত ভোটারের সংখ্যা ২৪৯ জন।সেখানে একমাত্র ১৪৮ নম্বর বুথেই নেই কোনো মৃত ভোটার।এমনই বলছে বিধানসভা ভিত্তিক নির্বাচন কমিশনের দেওয়া প্রতিদিনের রিপোর্ট।যা নিয়ে প্রশাসনিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
এলাকার BLO বুথে ঘুরে সাধারণ বেশ কিছু ভোটারের সাথে কথা বললে এবিষয়ে কেউ অবগত নই এমনটাই জানান।তবে বিএলও’র কাজ নিয়ে যে তাদের মধ্যে কোনো অসন্তোষ নেই দাবি এলাকার মানুষের।এই বুথের গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা উত্তম হাতি।দেড় বছর আগে তিনি মারা যান।বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী বন্দনা হাতির সাথে কথা বলে জানা যায় SIR শুরু আগেই তার স্বামীর নাম ভোটার তালিকা বাদ দিতে তার বাড়িতে বিএলও গিয়ে তথ্য নিয়ে নেন এবং তালিকা থেকে স্বামীর নাম বাদ দেন বলে বন্দনা দেবী জানান।
এই বিষয়ে ১৪৮ নম্বর বুথের বিএলও বিকাশ লাহা জানিয়েছেন,’আমার বুথের ভোটার তালিকা পুরো যাচাই করুক,কোনো অসুবিধা নেই।আমি ২০১২ সাল থেকে এই কাজ করছি।আমার বুথে কেউ মারা গেলে ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়ার ১৫ দিনের পর আমি খোঁজ নিয়ে তার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া কাজ করে এসেছি।এসআইআর শুরু হওয়ার আগেও আমি ২ জন মৃত ভোটারের নাম বাদ দিয়েছি।পৌরসভার দেওয়া ডেথ লিস্ট ও ভোটার তালিকা মিলিয়ে দেখলেই তো স্পষ্ট হয়ে যাবে।এটা নিয়ে ভাববার কিছু নেই।’তবে আত্মবিশ্বাসী প্রশাসনের নজরে থাকা এই ১৪৮ নম্বর বুথের বিএলও বিকাশ লাহা।
অন্যদিকে বুথে তৃণমূলের বিএলএ কাঞ্চন আশ জানান,’বুথে যা মৃত ভোটার ছিল বিএলও সেসব এসআইআর এর আগেই বাদ দিয়েছেন তাই স্বাভাবিক ভাবে এখন তালিকায় শুন্য দেখাচ্ছে।’ বিজেপির বিএলএ শীর্ষেন্দু খাঁ বলেন,’বিএলএ ভালো কাজ করেছে,আমরাও সাহায্য করেছি।আর বিএলও নতুন না সে আগে থেকেই নিয়মিত মৃত কেউ থাকলে তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়ে দিতো।’
অপরদিকে সিপিএমের বিএলএ পাঁচু লাহা,তিনিও সহমত বিজেপির বিএলএ এর বক্তব্যে।মৃত ভোটারদের নাম তালিকায় রেখে দেওয়ার চেষ্টা করছে শাসকদল।এমন অভিযোগ তুলে আকছার সরব হতে দেখা যায় বিরোধীদের।চন্দ্রকোনার ১৪৮ নম্বর বুথ মৃত ভোটারহীন,তা নিয়ে বিএলও’র পাশে দাঁড়িয়ে একই সুরে বক্তব্য রাখছেন বাম বিজেপি উভয়ই।এও ব্যতিক্রমী বলা চলে।
এই বিষয়ে চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের বিডিও উৎপল পাইক বলেন,’চন্দ্রকোনা বিধানসভার দু’নম্বর ব্লকে মোট ১৩৮ টা পার্ট রয়েছে।সব বুথেই আমরা ডেথ,সিফটেড খুঁজে পেয়েছি।কিন্তু চন্দ্রকোনা পৌরসভার ১৪৮ নম্বর পার্টে আমরা একটাও ডেথ খুঁজে পাইনি।তার কারণ,এখানের যিনি বিএলও আছেন তিনি এক্টিভ।কেউ মারা যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে উনি ফর্ম ৭ পুরন করিয়ে রোলে আপডেট করে দেন।’বিএলও’র কাজের প্রশংসা করলেও,ওই বুথ যে তাদের নজরে রয়েছে এবং ভালো করে সার্ভে করে বিএলও’র কাজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাও বিডিও স্পষ্ট করেন।তিনি বলেন,’আমরা ১৪৮ পার্টকে ভালো করে সার্ভে করেছি,এখনও করছি।খোঁজখবর নিচ্ছি,আমি নিজে গিয়েছিলাম।এই পার্টে একজন ৮৫ বছর বয়সী ভোটার রয়েছেন আমি নিজে তার ছবি তুলে এনেছি।’ তবে যে যাই বলুক, SIR আবহে মৃত ভোটার শূন্য এই বুথ নজরে রয়েছে প্রশাসনের।