
ঝাড়গ্রাম 13 ই নভেম্বর:
বেলপাহাড়িতে ৬ জন সিপিএম কর্মীকে নৃশংস খুনের ঘটনায় ৪৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ ঝাড়গ্রামের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত। বুধবার সাজা ঘোষণা করেন ঝাড়গ্রামের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক অরবিন্দ মিশ্র।

১৯৯৩ সালের ৮ মে বেলপাহাড়ি ব্লকের অন্তর্গত দিয়াশী গ্রামের ঘটনা। এলাকার বাসিন্দাদের কাছে যা ‘দিয়াশী গণহত্যা’ নামে পরিচিত। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দিয়াশী গ্রামে একটি বাঁধ রয়েছে। ওই বাঁধের ব্যবহার নিয়ে স্থানীয় সিপিএম এবং ঝাড়খণ্ড পার্টির লোকজনের মধ্যে বিরোধ হয়েছিল। দিয়াশী গ্রামের বাসিন্দা তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক মহেন্দ্রনাথ হেমব্রমকে খুন করেছিল সিপিএম। ওই ঘটনার পাল্টা ঝাড়খণ্ড পার্টির কর্মীরা কোয়ার্ক ডাক্তার সহ মোট ৬ জন সিপিএম কর্মীকে নৃশংস ভাবে খুন করে খালের জলে ভাসিয়ে দিয়েছিল বলে অভিযোগ। নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছিল দিয়াশী গ্রামের ভক্তিপদ মাহাতো, কার্তিক মাহাতো, মাধব মাহাতো, বিদ্যুৎ মাহাতো, হিজলা গ্রামের মনোজ গরাই এবং শিলদার বাসিন্দা তথা কোয়ার্ক ডাক্তার সমীর মুখার্জীকে। দিয়াশী গ্রামের বাসিন্দা ভক্তিপদ মাহাতোর বাবা নিত্যানন্দ মাহাতো বেলপাহাড়ি থানায় ১৯৯৩ সালের ৮ মে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।

নিত্যানন্দের অভিযোগের ভিত্তিতে বেলপাহাড়ি থানার পুলিশ ওই দিন মামলা রুজু করেন। মোট ১০৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়। গ্রেপ্তারের পর অভিযুক্তরা সকলেই আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। গত ৩২ বছরে এই মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে ৩৯ জন ইতিমধ্যে মারা গিয়েছেন। ১৯ জন নিরুদ্দেশ রয়েছে বলে পুলিশ আদালতে জানিয়েছেন। বাকি ৪৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জগঠন হয় ২০২৫ সালের ১৭ জুলাই। তারপর ঝাড়গ্রামের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত ১৮ আগস্ট থেকে পুলিশ, ডাক্তার সহ মোট ১৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালত। এরপর ২৮ অক্টোবর থেকে মামলার আর্গুমেন্ট শুরু হয়। গত সোমবার ১০ নভেম্বর ৪৫ জনকে বিচারক দোষী সাবস্ত ঘোষণা করেন। এদের বেশির ভাগের বয়স পঞ্চাশোর্ধ্ব। তারপর ৪৫ জনকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়।

বুধবার বিকেলে এজলাসে রায় পড়ে শোনান ঝাড়গ্রামের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক অরবিন্দ মিশ্র। আদালতের ভেতরে পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল। ঝাড়গ্রাম জেলা আদালতের সরকারী আইনজীবী প্রশান্ত রায় বলেন,‘বিচারক ৪৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ২২ হাজার টাকা করে জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন।’ ঝাড়গ্রাম জেলার সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন বলেন,‘দেরিতে হলো বিচার পাওয়া গিয়েছে । বিচার ব্যবস্থার উপর আমাদের ভরসা ছিল এবং আগামী দিনও থাকবে’।