
ক্ষীরপাই 16 ই অক্টোবর:
এ মায়ের পুজোতে লাগেনা পুরোহিত এখানে আপনিই পুরোহিত।নাম? ‘বড়মা’। নামেই নয় দেখতেও বড়,কংক্রীটের তৈরি প্রায় ৪৫ ফুট উচ্চতার কালী মা ভক্তদের কাছে ক্ষীরপাইয়ের বড়মা নামেই পরিচিত। দিন দিন বেড়েই চলছে ভক্তদের ঢল। অন্নকূট গ্রহণ করেন কয়েক হাজার মানুষ।

এক্কেবারে ৪৫ ফুটের সাক্ষাৎ বৃহৎ মা। দূর থেকে দেখলে যেমন ভয়ংকর লাগে তেমনই সুন্দর লাগে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এক ভয়ঙ্কর সুন্দর কালী প্রতিমা যার একটাই নাম বড়মা। নৈহাটির বড়মার পরেই এই বড়মার নাম রয়েছে গোটা রাজ্য ও দেশজুড়ে। এই মায়ের পূজোর সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো ভক্তরা নিজের অভাব অভিযোগ নিয়ে নিজেরাই পুজো দিতে পারবে মায়ের কাছে। মূলত এই বড়মার স্থান হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ক্ষীরপাই পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড চিরকুনডাঙ্গা এলাকায়। শুধু চন্দ্রকোনা নয় জেলা ছাড়িয়ে ভিন জেলা এমনকি ভিনরাজ্যের মানুষও এই কালী মাকে বড়মা নামেই জানে।পুজোর সময় স্থানীয় আশপাশের মানুষ ছাড়াও জেলা ও ভিন জেলার দুরদুরান্তের মানুষও ভিড় জমায় ক্ষীরপাই বড়মার পুজোয়।শশ্মানকালী হলেও এপুজোয় বলি হয়না।সমস্ত রীতি মেনেই এখানে পুজো হয়।পুজোর পরের দিন হাজার হাজার মানুষ আসে মায়ের খিচুড়ি প্রসাদ খাওয়ার জন্য।

পুজোর বৈশিষ্ট্য হল :
বছরের যে কোন দিন যেকোনো জায়গার ভক্ত তার মনস্কামনা নিয়ে যেতে পারেন।তিনি প্রসাদ সংগ্রহ করতে পারেন।ফলমূল নৈবেদ্য সহকারে নিজের হাতে তার অভাব অভিযোগ জানাতে পারবেন এবং পুজো করতে পারবেন এই বড়মাকে। যদিও এখানে দান দক্ষিণা দেওয়ার কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কমিটির তরফ থেকে।এই মন্দিরে নেই কোন পূজারী। কেবলমাত্র কালীপূজা এবং অমাবস্যার সময় পুজো করেন নির্দিষ্ট পূজারী।তাই তিথির সময় ছাড়াও প্রতিদিন বিভিন্ন প্রান্তের অগনিত মানুষ মায়ের দর্শনে আসেন।তারা নিজেরাই নিজের মতো করে মায়ের পুজো দিতে পারে পুরোহিত ছাড়াই।ভক্তদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হয় মন্দিরের পুজো আর্চনার কাজ।যে যার নিজের মতো করে নিজে হাতে পুজো দেয় বড়মাকে।

বড়মায়ের বৈশিষ্ট্য :
বিশালাকার কংক্রীটের বড় মায়ের এক হাতে রয়েছে পৃথিবী আর এক হাতে রয়েছে সাদা পায়রা,বাকি দুই হাতে কারতান ও মুন্ডচ্ছেদ।মায়ের রুদ্র রুপের পাশাপাশি,ধরিত্রীর রক্ষাকর্তা ও শান্তির বাহক হিসেবে একহাতে পৃথিবী ও অপর হাতে পায়রা।

এই বিষয়ে মন্দির প্রতিষ্ঠাতা শুদ্ধদেব রায় বলেন,”এই বড়মার মন্দিরে নিজের পুজো নিজেকে করতে হয়, একমাত্র অমাবস্যার সময় পুরোহিত পুজো করেন। এই মন্দিরে কোন দক্ষিণা লাগে না এবং এ বড়মা এত প্রচারিত যে আসাম উড়িষ্যা বাংলাদেশ থেকে ভক্ত সমাগম ঘটে ইন্টারনেট দেখে দেখে।এই কালী পুজোতে প্রসাদ খেতে হাজার হাজার মানুষের জনসমাগম ঘটে এই মন্দিরে। এর মাহাত্ম্য একমাত্র ভক্তরাই বলতে পারবে।

অন্যদিকে আগত ভক্ত নেহা মন্ডল,বন্দনা মহন্তরা বলেন,” এই বড়মা আমাদের নিজেদের মায়ের মত এত বড় মূর্তি শান্ত কোথাও নেই আছে যদিও নৈহাটিতে তবে তার বিসর্জন হয়ে যায় আর এখানকার কালীমূর্তি বিসর্জন হয় না। সারা বছরই মানুষ আসে পূজো দেয় এবং মনস্কামনা পূরণ হয়।পাশাপাশি সমীর ঘোষ,শ্যামাপদ সামন্তদের কথায় আগে এত বড় মন্দির বা একটা ব্যবস্থা ছিল না তবে দিন দিন ব্যাপ্তি ঘটেছে। তবে এটা দেখে খুব ভালো লাগে যেমন একটি মন্দির যেখানে নিজের পুজো নিজে করা যায়। এই বড়মার কাছে নিজের আবদার অভিযোগ জানানো যায় নিজের হাতে।