Jhargram Insident: বৌদির সঙ্গে যুবকের প্রেম!সেই যুবক খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত আট যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঝাড়গ্রাম আদালতের

Share

নিজস্ব প্রতিনিধি,ঝাড়গ্রাম:

গ্রামের বিধবা বৌদির সঙ্গে ২৪ বছরের যুবকের প্রেম! মেনে নিতে না পেরে নৃশংসভাবে খুন করে মাটিতে পুঁতে দিয়েছিল গ্রামেরই ৮ যুবক।দু’বছরের মধ্যে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত আটজনকে সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল ঝাড়গ্রামের জেলা ও দায়রা আদালত।সোমবার বিকেলে ৮ জনের সাজা ঘোষণা করেন জেলা জর্জ কল্লোল চট্টোপাধ্যায়।

মূলত পেশায় রাজমিস্ত্রির হেল্পার ছিলেন চব্বিশ বছরের সুরজ কোটাল।তাঁর বাড়ি ছিল ঝাড়গ্রাম থানার অন্তর্গত সাপধরা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রনব পল্লী এলাকায়।সূত্র অনুযায়ী সুরজ এক বিধবা মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন।যা মেনে নিতে পারেনি এলাকার কয়েক জন যুবক।তারপর তারা প্ল্যান করে সুরজ কে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে।সেই মত ২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল রাতে এলাকার কয়েক জন যুবক সুরজ কোটালকে সঙ্গে নিয়ে মদ খেতে বসে।তারপর তারা সুরজকে লাঠি দিয়ে মারধর করে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যায়।ওই রাতে সুরজ কোটালের পরিবারের লোকেরা চারিদিকে খোঁজাখুজি করেও কোন হদিশ পায়নি।শেষমেশ ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল সুরজের বাবা শশধর কোটাল ঝাড়গ্রাম থানায় ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

ওই ঘটনায় প্রতিবেশি সঞ্জয় কোটালকে আটক করে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে সুরজকে খুনের কথা স্বীকার করে।এই ঘটনার ১৪ দিন পর পাশ্ববর্তী ঢেঁকিপুড়ার জঙ্গলে কাজু গাছের নিচে মাটি খুঁড়ে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বিকেল পাঁচটা নাগাদ সুরজ কোটালের পচাগলা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।ওই ঘটনায় ঝাড়গ্রাম জেলার পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের(হেডকোয়ার্টার) নেতৃত্বে ঝাড়গ্রামের এসডিপিও,ঝাড়গ্রাম থানার আইসি বিপ্লব কর্মকারকে নিয়ে একটি স্পেশাল তদন্তকারী টিম(সিট) গঠন করেন।মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই অসীম বোস এবং ঝাড়গ্রাম থানার আইসি বিপ্লব কর্মকার তল্লাশি অভিযান চালিয়ে সঞ্জয় কোটাল,দুর্গা মল্লিক, কালু মল্লিক,চুনারাম মল্লিক, পিন্টু মল্লিক,অজিত মল্লিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।বাকি দু’জন গৌতম মল্লিক এবং অজিত মল্লিক পরবর্তী সময়ে আদালতে এসে আত্মসমর্পণ করেন।

গ্রেপ্তারের পর থেকে আটজনই ঝাড়গ্রাম বিশেষ সংশোধনাগারে বন্দি ছিলেন।পুলিশ ২০২৪ সালের ২৯ মার্চ আদালতে চার্জশিট জমা করে। তারপর শুরু হয় বিচার পর্ব। মোট ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।এই মামলায় স্পেশাল সরকারি আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করা হয় বাঁকুড়ার কুণাল কান্তি ঘোষকে।এদিন সাজা ঘোষণার পর স্পেশাল সরকারি আইনজীবী কুণাল কান্তি ঘোষ বলেন,” খুব দ্রুততার সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়া হয়েছে।বিচার শুরু হওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই বিচার শেষ হয়।এই ৮ জন আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবনের সাজা হয়েছে।তাদের ৩০২, ৩৬৪, ২০১ ধারায় তাদের প্রত্যেকেরই যাবজ্জীবন হয়েছে”।অন্যদিকে ২৪ বছরের ছেলেকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছিল সুরজের বাবা শশধর কোটাল।

আদালতের রায় ঘোষণার পর শশধর বলেন ,”আমি এদের সকলের যাবজ্জীবন সাজার বিচার চেয়েছিলাম। আজ আমার ছেলে প্রকৃত বিচার পেয়েছে”।ঝাড়গ্রাম জেলা আদালতে এই প্রথম কোন খুনের মামলায় আটজনের সাজা হল। ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের দায়িত্ব ও স্বচ্ছ ভাবে তদন্ত করায় দোষীদের সাজা ঘোষণা করতে সক্ষম হয়েছে ঝাড়গ্রাম আদালত।এই বিষয়ে ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলেন ,”ঝাড়গ্রামে জেলা আদালত চালু হওয়ার পর এই প্রথম কোন মামলায় একসঙ্গে এত জনকে সাজা ঘোষণা করা হল।একটি খুনের ঘটনায় আটজন দোস্তি সাব্যস্ত হয়েছে।এর সম্পূর্ণ ক্রেডিট আমাদের ঝাড়গ্রাম থানার আইসি বিপ্লব কর্মকার এবং স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটার কুনাল কান্তি ঘোষ এবং কেশের আইও অসীম বোস তাঁদের প্রাপ্তি।

এই মামলাটিতে অনেক ডিএনএ প্রমাণ এবং বিভিন্ন ধরনের টেকনিক্যাল প্রমাণের উপরও আমরা এটাকে প্রমাণিত করতে পেরেছি।আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে এমন একটি ঘৃণ্য অপরাধে আট জনকে সাজা ঘোষণা করাতে পেরেছি”।


Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

dnews.in