নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর:
ভালো নাম “সৌমেন খান”তবে মেদিনীপুরের লোকে সোমেন দা ডাকতেই অভ্যস্ত।বছর ৬৩ র এই B.SC পাস সৌমেন বাবু এখন মেদিনীপুর পৌরসভার রূপকার।একসময়ে পরিকাঠামো গতভাবে ভেঙে যাওয়া পৌরসভা কে রীতিমতো সাজিয়ে তুলেছেন তিনি।শুধু পৌরসভার চেয়ারম্যানের রুমকেই তিনি মডিফিকেশন করেছেন তা নয় গোটা পৌরসভার সঙ্গে ওয়ার্ডগুলোতেও তিনি মডিফিকেশন করে তুলছেন।এইসঙ্গে যানজট এড়াতে ফুটপাত দখলকারী দোকানদারকে সরিয়েছেন,নোংরা আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভ্যাটগুলো পরিষ্কার করেছেন, নদী নালা খাল বিল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রীতিমতো সৌন্দর্যায়নের ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন।শহরের শেষ প্রান্ত গান্ধীঘাটে সন্ধ্যা আরতির মাধ্যমে নতুন দিশা দেখাচ্ছেন মেদিনীপুর বাসিকে।যার ফলে শুধু শাসক নয়,বিরোধী রাও প্রতিবাদ করতে পথ ভুলেছে।বদলে তারা সাধুবাদ জানিয়েছেন এই চেয়ারম্যান ও মেদিনীপুর পৌরসভার অ্যাডমিনিস্ট্রেটর কে।
কে এই ‘সৌমেন খান’!এক বাক্যে বলতে গেলে মেদিনীপুর পৌরসভার ১৮নং ওয়ার্ড জগন্নাথ মন্দির পালবাড়ি এলাকায় সৌমিত্র রায়,মোনালিসা রায়ের মৃত্যুর পর ৯৮ সাল নাগাদ তিনি কংগ্রেস থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী করে জয়ী হয়েছিলেন কাউন্সিলর হিসেবে।তখন থেকেই তার পথ চলা শুরু মেদিনীপুর পৌরসভাতে।তবে তার আগে তিনি ছাত্র পরিষদ করতেন।সোনিয়া গান্ধী মারফত বেস্ট ক্যাডার হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।একে একে প্রতিবছরই তিনি জয়লাভ করেছেন।কখনো তার ওয়ার্ডটা মহিলা সংরক্ষিত হয়ে যাওয়াই স্ত্রী সুনন্দা খানকে দাঁড় করিয়ে পাশে থেকে লড়াই করে জিতে এনেছেন তার ওয়ার্ড।এই নিয়ে প্রায় ৬ বার জিতেছেন তিনি।এক কথায় বলা যেতে পারে তার প্রতিপক্ষ কোনোভাবে সুযোগই পায়নি ওয়ার্ড দখলের।মাঝখানে মাওবাদীর বাড় বাড়ন্তের জন্য তিনি গড়বেতার গোয়ালতোড় থেকে এমএল প্রার্থী হয়েও লড়াই করেছেন।নদী প্রান্তর এলাকা কিন্তু তিনি মানুষের মন জয় করেছেন রাতে ভিতে পাশে থেকে।সে ভোর চারটা হোক,কিংবা রাত তিনটে কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় অথবা শ্মশানে মড়া পোড়ানোর ক্ষেত্রেও ফোন করে ডাকলেই ছুটে এসেছেন সদা হাস্যমুখে।তিনি আর কেউ নন মেদিনীপুরের গৌরব সৌমেন খান।
দীর্ঘদিন কংগ্রেসের কাউন্সিলর হিসেবেই মেদিনীপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।যখন কংগ্রেস ভেঙে চুরে মিছিলে যোগানোর ১০ জনও নেই,সেই সময় নিজের ওয়ার্ড থেকে লোক নিয়ে তিনি মিছিল ভরিয়েছেন নির্দ্বিধায়।।তিনি জেলা সভাপতির পদ সামলানোর পাশাপাশি রাজ্য পদেও অধিষ্ঠিত ছিলেন একাধিক বার।তবু তার শরীকরা তাকে টিকতে দেয় নি কংগ্রেসে।আস্তে আস্তে কংগ্রেসের বর্তমান সভাপতি সমীর রায়ের দ্বন্দ্বের কারণে তিনি কোনঠাসা হয়ে পড়েন। কোথায় যাবেন,কি করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না একসময়।এরপর ২০২১ সালে তিনি খোদ মমতার হাত ধরে তৃণমূলে যোগদান করেন।তবে যোগ দিয়েই ঝকমকিয়ে ওঠেন এই সৌমেন বাবু।এরপরই পৌরসভা নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন ওয়ার্ড থেকে এবং বিধায়িকা জুন মালিয়ার হাত ধরে তিনি চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন মেদিনীপুর পৌরসভার।২৫ টি ওয়ার্ডের মধ্যে কুড়িটি তৃণমূলের দখলে তাই তিনি কুড়িজন কাউন্সিলর কে নিয়ে মেদিনীপুর পৌরসভার পথ চলা শুরু করেন।প্রথমেই তিনি এসে সময় বেঁধে দেন পৌরসভার এবং কাজের অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।সবার মডিফিকেশন করেন,সাজিয়ে গুছিয়ে তোলেন পৌরসভার চেয়ারম্যানের কক্ষটিও।তার আড়াই বছরে কাজের মধ্যে অন্যতম হলো হাউস ফর অল প্রজেক্টে ২৪ কোটির কাজ হয়ে আছে।
যাতে সাড়ে ৮০০ বাড়ি কমপ্লিট বাকি প্রায় ২৩০০ বাড়ি।নতুন প্রজেক্ট বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে সঙ্গে LED লাইট দেওয়া যার জন্য টেন্ডার হয়েছে ১কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা।নতুন করে জহর থান তৈরি হচ্ছে,তৈরি হচ্ছে সিধু কানুর মূর্তি যা মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে উদ্বোধন হবে।এছাড়াও ৫০-৬০ টি প্রজেক্ট এর কাজ চলছে তার জমানায়।রামকৃষ্ণ মিশনের উল্টো দিকে রাস্তায় মিনি ইনডোর তৈরি করা হচ্ছে যাতে কবাডি,খো খো খেলা হবে।তিনি সরকারি জায়গা দখল আটকাতে সরকারি প্রজেক্টএর কাজ করছেন অতি দ্রুত।ইতিমধ্যে নতুন করে ২টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্বোধনের অপেক্ষায়,আরো ৪ টা হবে মেদিনীপুরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে।তার তৈরি করা অন্যতম প্রজেক্ট হলো “আই লাভ মেদিনীপুর”প্রজেক্ট যা নজর কেড়েছে জেলার মানুষের।এছাড়াও যানজট এড়াতে কেরানিতলা থেকে জর্জ কোর্ট পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারণ হবে খুব দ্রুত।তার এই ক বছরের চেয়ারম্যানের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট দেখা যায়নি কংগ্রেস,সিপিএম,এমন কি নির্দল সহ বিরোধীদের মধ্যে।উল্টে পৌরসভার মধ্যেই শাসক দলের পাশাপাশি কেক কেটে জন্মদিন পালন করেছেন বিরোধী কাউন্সিলারেরও।
সম্প্রতি গান্ধী ঘাটের গঙ্গা আরতি তার মুকুটে নতুন পালক যোগ হয়েছে।তিনি কাজ করতে গিয়ে শুধু একা নন বরং তার প্রিয় কাউন্সিলার সৌরভ বসু,সুসময় মুখার্জি,চন্দ্রানি দাস,অনিমা সাহা,অর্পিতা রায় নায়েক দের নিয়ে অনুষ্ঠান সেরেছেন।তবে,নিজ হাতে একা কাজ করতে গিয়ে তিনি নিজের শাসকদলের কয়েকজন কাউন্সিলরের অসন্তুষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এমনকি সেই ১০ জন কাউন্সিলর তার অপসারণের দাবিতে পৌরসভার বিরুদ্ধে অবস্থানও বসেছিলেন।তবে ভাগ্য সাথ দেয়নি তাদের।কলকাতার বৈঠকের পরেই চেয়ারম্যানের পদে বহাল রয়েছেন সেই পুরানো “সৌমেন বাবুই”।তার লাকি নম্বর নাকি ১৬ কারণ যা কিছু তার জীবনে ভালো ঘটেছে তা ১৬ তারিখেই ঘটেছে।
এই বিষয়ে মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান, অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সৌমেন খান বলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই যোগদান।তারা যেমন যেমন নির্দেশ দেবেন তেমন ভাবেই কাজ করব।২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টায় মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়েছি।