
খড়্গপুর 30 সে নভেম্বর:
কর্তব্যরত অবস্থায় চলন্ত ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হলো ট্র্যাকম্যানের! ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ‘রেলশহর’ খড়্গপুরে। মৃত ট্র্যাকম্যানের নাম মহম্মদ মনজুর হায়দার। ৫৪ বছর বয়সী মনজুরের বাড়ি খড়্গপুর শহরের ৫নং ওয়ার্ডের দেবলপুর কালকাটি এলাকায়। শনিবার সকালে মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটে খড়্গপুর স্টেশন সংলগ্ন নিমপুরা ইয়ার্ডের কাছে আইমা এলাকায়, খড়্গপুর-বালেশ্বর লাইনে। এই ঘটনায় রেলের চূড়ান্ত গাফিলতির অভিযোগ তুলে পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে ‘গ্যাংম্যান সংগ্রাম কমিটি’।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে এই গ্যাংম্যান সংগ্রাম কমিটির আন্দোলনের ফলেই চাকরি পেয়েছিলেন মনজুর হায়দার সহ কয়েকশ গ্যাংম্যান। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন খড়্গপুরের বাম শ্রমিক নেতা তথা ‘আমরা বামপন্থী’-র সম্পাদক অনিল দাস ওরফে ভীম দা। শনিবারের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরও পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে ভীম দা সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ ও মনজুরের স্ত্রীর চাকরির দাবি করেছেন। রেল পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, রেলের ট্র্যাকম্যান পদের অন্তর্গত কি-ম্যান হিসেবে কাজ করতেন মঞ্জুর। শনিবার সকালেও সেই কাজ করছিলেন তিনি। খড়্গপুরের আইমা এলাকায় একটি এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। খবর পেয়ে খড়্গপুর জিআরপি-র তরফে দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ দেহ পৌঁছয় দেবলপুরের বাড়িতে।

কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী পুতুল খাতুন (৪৯) ছাড়াও পরিজনেরা। মনজুরের একমাত্র ছেলে উত্তরবঙ্গের একটি কলেজে এমবিবিএস পড়ছেন বলে জানা যায়। খবর পেয়েই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন তিনি। এই ঘটনায় রেলের চূড়ান্ত গাফিলতির অভিযোগ তুলে অনিল দাস বলেন, ‘ট্র্যাকম্যানেরা যখন লাইনে কাজ করেন, তাঁদের সাথে একজন করে লুকম্যান দেওয়া হয়। আমাদের আন্দোলনের ফলেই রেলের বিভিন্ন শাখায় এটা চালু হয়েছে। খড়্গপুর-বালেশ্বর লাইনে এখনও কেন সেই সিস্টেম চালু হলো না, আমাদের সেটা প্রশ্ন। লুকম্যান না থাকলে, ট্র্যাকম্যান বা কি-ম্যানদের সাথে একটি স্বয়ংক্রিয় মেশিন থাকার কথা। তাতে ওদের কাছে লাইনে ট্রেন আসার বার্তা পৌঁছয়। এক্ষেত্রে মনজুরের কাছে সেটাও ছিলনা। তাই কোনভাবেই এই মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না রেল!’ রেলপুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ অনিলের।

তিনি বলেন, ডাউন সম্বলপুর-শালিমার এক্সপ্রেসের ধাক্কায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রায় ২-৩ ঘন্টা পর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই বিষয়ে খড়্গপুর জিআরপি-র এক আধিকারিক বলেন, ‘আমরা খবর পাওয়ার পরই দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই।’ সকাল ১১টা নাগাদ দেহ উদ্ধার হয় বলেও জানিয়েছেন তিনি। এই বিষয়ে খড়্গপুর ডিভিশনের ডিআরএম ললিতমোহন পাণ্ডের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও, তাঁর সাড়া মেলেনি।

তবে, রেলের এক জনসংযোগ আধিকারিক জানিয়েছেন,’ওই পরিবারের পাশে থাকবে রেল। নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ সহ অন্যান্য সুবিধাও পাবেন।’