অবসর নিয়েও কৃতিত্বে উজ্জ্বল এক যন্ত্রগাড়ি! প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে কাহিনী শোনাচ্ছে জঙ্গলমহলের

Share

নিজস্ব প্রতিনিধি,মেদিনীপুর :

একদা জঙ্গলমহল অধ্যুষিত পশ্চিম মেদিনীপুরে ছিল মাওবাদীদের রমরমা। লাল পোস্টার এর লেখা হুমকি এরই সঙ্গে সশস্ত্র অভিযানেরও কেঁপে উঠে এই মেদিনীপুর জেলা। বিশেষ করে অবিভক্ত মেদিনীপুরের সালবনী,গড়বেতা,গোয়ালতোড়, পিংবনী,রামগড়, পিড়াকাটা,ভীমপুর,লালগড়,হুমগড়, চাঁদড়া সহ জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ অংশে এই মাওবাদীদের কার্যকলাপে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে জঙ্গলমহল বাসি। এমনকি খোদ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের গাড়ি ল্যান্ডমাইন্ড বিস্ফোরণ করে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।অবশেষে এই মাওবাদিদের দমন করতে আনা হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। রাতারাতি একাধিক যৌথ বাহিনীর ক্যাম্প গড়ে ওঠে এই লালগড়,ভীমপুর,রামগড় পিড়াকাটার বিভিন্ন জায়গায় জায়গায়।তারপরও সশস্ত্র আক্রমণ অব্যাহত ছিল। ছিল ল্যান্ড মাইন্ড বিস্ফোরণের মতন ভয়ংকর ঘটনা।এরকমই পরিস্থিতিতে ২০০৬ সালে মেদিনীপুরে আনা হয় প্রথম অ্যান্টি ল্যান্ড মাইন গাড়ি। এই গাড়ি যৌথবাহিনী সহ রাজ্য পুলিশকে নিরাপত্তা দেয়। বিভিন্ন বড় বড় ধরনের দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করে আজও জীবন বাঁচিয়েছে বহু মানুষের। শুধু দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়াই নয় সেই সঙ্গে ঝুঁকি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে করেছে একাধিক অপারেশন। ২০০৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অংশ নিয়েছে এই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অপারেশনে।এরপর সেই ল্যান্ড ল্যান্ড মাইন গাড়ি নিয়েছে অবসর।তবে তার কৃতিত্বকে ছোট করে দেখায়নি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। ইতিমধ্যে সেই অবসর নেওয়া অ্যান্টি ল্যান্ডমাইন গাড়ির কে অতি সযত্নে দেখভাল করে রাখা হয়েছে মেদিনীপুর জেলার পুলিশ অফিসের সামনে। মূলত প্রদর্শনী এবং সেই সঙ্গে তার স্মরণীয় দিকগুলি তুলে ধরার জন্যই পুলিশি ব্যবস্থা। পুলিশ অফিসে আসা মানুষ জন সেই গাড়ির যেমন কৃতিত্ব জানতে পারছে সেই সঙ্গে বহু মানুষ আসছে এই অ্যান্টি ল্যান্ডম্যান্ড গাড়িটি কাছ থেকে একবার দেখতে একবার ছুঁতে এবং সঙ্গে সেলফি তুলতে। আজও সহ মহিমায় স্বর গৌরবে নিজের কৃতিত্ব বহন করে চলছে এই যন্ত্র গাড়িটি।

এই গাড়িটি তার স্মৃতিতে লিখেছে আমি এমপিভি নং – ৩৪ এস – ৩৩৫৬।আমার পুরো নাম মাইন প্রটেক্টেড ভেহিকেল।আমি গত ২০০৬ সালের ৩রা মে জঙ্গলমহল অধ্যুষিত পশ্চিম মেদিনীপুরে আমার যোগদান। এরপর বিভিন্ন থানার পাশাপাশি শালবনি পিড়াকাটার পিপিতে আমার বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত হয়েছে। আমি মাওবাদী হামলা,বন্দুক গুলি,ল্যান্ড মাইন,আর ডিএক্স, ডিনামাইড হামলার মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু কিছুই আমাকে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখতে পারেনি। যন্ত্রটি লিখেছে যে তারা জানে না আমি ১৪ কেজি পর্যন্ত আরডিএক্স প্রতিরোধ করতে পারি। সুবর্ণরেখা কংসাবতী ও শিলাবতী নদীর যেমন জল বেড়েছে তেমনি আমার ধীরে ধীরে বয়স বেড়েছে। চাকরির নিয়ম অনুযায়ী ২০১৪ সালের ৩রা মে আমি অবসর নিয়েছি। যদিও আমার কোন সংসার নেই। তবে আমি সেইসব পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি যারা সংসার সন্তান, স্ত্রী বাবা-মা,বন্ধু বান্ধব ছেড়ে জনগণের নিরাপত্তার জন্য তাদের মূল্যবান জীবন উৎসর্গ করেছিল। আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে ভালো লাগলো, আপনার দিনটি শুভ হোক।

এ বিষয়ে জেলার পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার জানান

এই গাড়ি যেভাবে একের পর এক বড় বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে পুলিশে রক্ষা করেছে বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নিয়েছে তাই তার কৃতিত্ব তুলে ধরতেই আমাদের প্রয়াস। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুরে না বাঁকুড়া জেলাতেও প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে এই ধরনের গাড়ি।

অন্যদিকে এ গাড়ি দেখতে আসা অভিনন্দন মুখোপাধ্যায়,দেবাশীষ দে রা বলেন জেলার ক্ষেত্রে এক অন্য পালক।এই গাড়ি একসময় জঙ্গলমহলের পুলিশ বাহিনীকে পাহারা দিয়েছে।শুধু তা নয় সে সঙ্গে জঙ্গলমহলের বহু মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। তাকে কাছে দেখতে পেয়ে এবং হাত দিতে পেরে আমরা খুশি। তার কৃতিত্বে আমরা খুশি হয়েছি। জেলা বাসি হিসেবে আমরা গর্বিত।


Share

dnews.in